নিজস্ব প্রতিবেদক:
এমপি শামীম ওসমান বলেছেন, আপনারা সুযোগ নিতে চান, খেলতে চান। আপনারা খেলবেন আমাদের সাথে, কবে খেলবেন বলেন।
আমরাও খেলতে চাই। আপনারা ধ্বংসের পক্ষে, আমরা খেলবো ধ্বংসের বিপক্ষে। আপনারা খেলবেন সাম্প্রদায়িকতার ক্ষেত্রে, আমরা খেলবো অসাম্প্রদায়িকতার ক্ষেত্রে। ডেট দিন কবে খেলবেন।
তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশে ঝামেলা করার দরকার কী? আসুন নারায়ণগঞ্জে খেলি। তারেক রহমান সাহেবের নির্দেশে খেলছেন। সাহেব বলছি, যদি আবার ওপর থেকে মারেন। মুসলমান একবার মরে, দুইবার মরে না। আমার সত্যি খালেদা জিয়ার জন্য কষ্ট লাগে। আমি তার জন্য নামাজ পড়ে দোয়া করি। শেখ হাসিনা বলেছিলেন, মানুষ অসুস্থ হলে সে যদি শত্রুও হয়, তার জন্য দোয়া করবে। লন্ডন থেকে নির্দেশ আসছে, আপনারা বাংলাদেশে বসে লাফাচ্ছেন।
শনিবার (২৭ আগস্ট) বিকেল ৩টায় নারায়ণগঞ্জের ২নং রেলগেট এলাকায় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শামীম ওসমান।
তিনি বলেন, আমাদের রাজনীতি করার কথা ছিল না বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে। বঙ্গবন্ধু আর পনেরো বছর পেলে বাংলাদেশ জাপানের মতো উন্নত দেশ থাকত। আপনারা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ করেন এটা বলব না। আমি বলব, শেখ হাসিনা শুধু আওয়ামী লীগের স্বপ্ন না। শেখ হাসিনা আগামী দিনের সুন্দর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। গত ১৬ আগস্ট জাতির জনকের কন্যা বলেছেন, চতুর্দিক থেকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আরেকটি পঁচাত্তর, একুশে আগস্টের ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা হচ্ছে। জাতির পিতার কন্যাকে বলতে চাই— হতে পারেন আপনি নীলকণ্ঠী, চেষ্টা করেছি আপনার মতো হওয়ার। খোকন সাহাকে নাকি ন্যাংটো করে ঘোরাবে। তার আগে চিন্তা করবেন। রাজনীতিতে এই ভাষা চলে না। আপনারা ভাবছেন, আপনারা এ ভাষায় কথা বললে আমরা আপনাদের আঘাত করব। আমরা তা করব না। আমাদের ভুল থাকলে ভুল ধরিয়ে দেন। আপনারা তা করছেন না।
শামীম ওসমান আরও বলেন, আপনাদের টার্গেট সরকার ফেলে দেওয়া নয়, শেখ হাসিনাকে ফেলে দেওয়া। কোকো মারা গেল, জাতির পিতার কন্যা গেলেন তার বাসায় সহানুভূতি জানানোর জন্য। তাকে অপমান করা হলো। আপনি (শেখ হাসিনা) আবারও বলছেন, গণভবন পর্যন্ত এলে চা খাওয়াবেন। এটা হতে পারে না। যারা আপনাকে হত্যার চেষ্টা করে, যারা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের সংসদে বসায়, বাংলার মানুষ চায় না আপনি তাদের চা খাওয়ান। আপনি গণতন্ত্রের কথা বলেন, ওরা এটাকে দুর্বলতা ভাবে।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান দেশে আসলেন। ২২টি সংগঠন গেল, গিয়ে বললো, র্যাব এটা করেছে, সেনাবাহিনী এটা করেছে। এটা কেন বলতে ভুলে গেলেন আমাদের দেশে ১৫ লাখ রোহিঙ্গা এসে বসে আছে। এই পুলিশ, সেনাবাহিনী আমাদের গর্ব। এই র্যাবের ভূমিকা আপনারা অস্বীকার করতে চান? রোহিঙ্গা ইস্যু তো সবচেয়ে বড় বিষয়। বার্মায় গিয়ে কেন বলেন না রোহিঙ্গা ফেরত নাও নয়তো স্যাংশন দেওয়া হবে।
সামনে কঠিন সময় আসছে মন্তব্য করে শামীম ওসমান বলেন, ওরা বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চায়। ওরা ওদের জায়গায় ঠিক আছে। আমরা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বিভক্ত। বলেছিলাম, আমি স্লোগান দেব, আপনারা বক্তৃতা দিয়েন। সবাই তো বুঝল না। অনেকেই বুঝে না বোঝান ভান করেন। তারা আমাদের হুমকি দেন। শেখ হাসিনাকে ২১ বার মারার চেষ্টা করা হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী কত মানুষকে হত্যা-ধর্ষণ করা হয়েছে পত্রিকায় পাবেন। তখন কোথায় ছিল মানবাধিকার?
তিনি বলেন, ’৮১ সালে নেত্রী দেশে ফিরে আকুতি মিনতি করলেন দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে। গেটটা জিয়াউর রহমান খুলে দেয়নি। সেখানে বসে একটু কান্নার সময়ও দেননি। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা আর্তনাদ করে কেঁদেছিলেন। আরেক বোন শেখ রেহানা তো কাঁদতেও পারেননি। আপাকে বললাম, অনেক হয়েছে আমাদের ছুটি দেন। তিনি বললেন, তোদের স্বপ্নপূরণ হয়েছে, আমার স্বপ্নপূরণ হয়নি। তিনি বাংলাদেশকে পৃথিবীর মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড় করাতে কাজ করে যাচ্ছেন।
শামীম ওসমান আরও বলেন, আমি জানি জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। মানুষের কষ্ট হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে। প্রথমে রোহিঙ্গা সমস্যা এলো, তারপর এলো কোভিড। সাউথ-ইস্ট এশিয়ার মধ্যে প্রথম ও সারা বিশ্বে পঞ্চম হলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়েছেন। আল্লাহ তাকে সুস্থ রাখুক। তাদের সময় আমার বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়েছিল, আমার বহু লোককে হত্যা করা হয়েছিল। আমি যদি দোয়া করি আল্লাহ অবশ্যই দোয়া কবুল করবেন। লন্ডন থেকে যিনি হুকুম দিচ্ছেন, ছেলে হয়ে তো আসলেন না বাংলাদেশে। বুকে কলজে নাই নাকি সাহস নাই? আপনি লন্ডনে আরামে থাকেন নিজের ছেলের বউ তো বড় নামকরা ডাক্তার। শাশুড়ি তো মায়ের মতোই। আমার মা যখন অসুস্থ, আমার বোনরা যেমন সেবা করেছে, আমার বৌও তেমনি সেবা করেছেন। তিনিও তো আসতে পারতেন, আসলেন না। তাদের একজন মেয়েও আছে। দাদীকে দেখতে তো একবারও আসলেন না। যারা তার কথায় নাচছেন, তারা কি ভেবেছেন যারা মায়ের জন্য আসে না, আপনি বিপদে পড়লে সে কি আপনার জন্য আসবে?
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নারায়ণগঞ্জের সভাপতি বাবু চন্দন শীল। শনিবার দুপুর থেকেই সমাবেশে হাজার হাজার নেতাকর্মী ব্যানার ফেস্টুন হাতে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে হাজির হন।
সমাবেশে বক্তব্য রেখেছেন— মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. খোকন সাহা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ওয়াজেদ আলী খোকন, যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহসিন । এসময় মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি চন্দন শীল, সাংগঠনিক সম্পাদক এড .মাহমুদা মালা, ছাত্রলীগ নেতা মোঃ আবির হোসেন, মোঃ হৃদয়, মোঃ সদয় এবং আবু মোঃ সায়েম উদ্দিনসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।